সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিব হুজুর নামে ‘জিনের বাদশার’ ফাঁদে পা দিয়ে শত শত নারী সর্বশান্ত হচ্ছেন। ভন্ড কবিরাজ হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। স্থানীয়দের অভিযোগ, হাবিব হুজুরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ থাকার পরও রহস্য জনক কারণে পুলিশ প্রশাসন নিরব ভুমিকা পালন করছেন। নানা রুপী হাবিব এলাকায় স্থানীয় সন্ত্রাসীদের ছত্রছায়ায় নারীদের চিকিৎসার নামে সর্বশান্ত করে দিচ্ছেন। সে চামুরকান্দি এলাকার বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইউছূফ আলীর বাড়ি সংলগ্ন মৃত ছিদ্দিকের ছেলে। তেমন কোন শিক্ষাগত যোগ্য না থাকলেও তিনি নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিচ্ছেন।
হেকিম বলে পরিচয় দিচ্ছেন। কখনও নিজেকে বড় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রশাসনকে বৃদ্ধাআঙ্গুলী দেখাচ্ছেন। কখন মানবাধিকার কর্মী বলেও পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি নিজ বাড়ি আড়াইহাজার পৌরসভার চামুরকান্দিতেই খোলে বসেছেন ‘মের্সাস জনকল্যান ফামের্সী’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এর আড়াঁলেই সে প্রতারণার ফাঁদ খোলেছেন। নিজেকে ‘জিনের বাদশা’ পরিচয় দিয়ে নারীদের বোকা বানাচ্ছেন। তার বেসবুশা দেখে খুব সহজেই নারীরা তাকে বিশ্বাস করে ফেলছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ হার্রবাল চিকিৎসার সাইনর্বোড টানিয়ে জন্ড্রিস, মুত্রথলির পাথর, কানে কমশোনা, প্যারালাইসিন্স, আলসার, বাতের ব্যার্থা, শরীরির জ্বলাপোড়া, স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি, যৌনরোগ, যৌন উত্তেজনা, প্রেমের বন্ধন জোড়া দেয়া, কাউকে বশ বা কব্জা করা, বিবাহ বিচ্ছেদ, বিবাহ বন্ধন, বান, শীরিরক সমস্যা, স্বামী ও স্ত্রীর অমিল, মামলা-মোকদমা নিম্প্রতি, মনে মানুষকে কাছে পাওয়া, বিদেশ গমন, পিত্তথলির পাথর সরানো, মন্দা ব্যবসাকে চাঙ্গা করাসহ সর্বরোগ ও সমস্যার চিকিৎসা তিনি মোটা অংকের আর্থিক চুক্তিতে করছেন। তার টেবিলেই সাজানো থাকে জিনের কুলির পানি, জিনের চুলের পানি,নদ-নদীর পানিসহ নানা অবৈজ্ঞানিক পর্থ। তার আস্তার চারোপাশে থাকে পাহাড়া। সাংবাদিক ঢুকতেই তার পালিত সন্ত্রাসীদের বাঁধার মুখে পড়তে হচ্ছে। বিভিন্ন মোবাইল থেকে দেওয়া হয়ে থাকে প্রাণনাশের হুমকী।
তবে হুযুকে পড়ে দিনভর বিভিন্ন এলাকার নারীরা ভীড় করছেন এখানে। অনেকেই তার কাছে এসে প্রতারিত হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। কাজের কাজ কিছু না হলেও হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ পুলিশ প্রশাসনকে মোটা অংকের টাকা মাসোহারা দিয়ে ম্যানেজ করেই নাকি সে বছরের পর বছর মানুষ প্রতারণার ব্যবসা করে বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক বনে গেছেন। মানুষ সর্বশান্ত হলেও হাবিব হুজুরের ভয়ংকর ফাঁদ পুলিশের চোখে ধরা পড়ছে না। এতে হতবাক এলাকাবাসী।
স্থানীয় এক সিনিয়র সাংবাদিক নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, হাবিবুর রহমান হুজুর একজন ভন্ড কবিরাজ। সবাইকে সে টাকা
দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিনের পর দিন অপর্কম করে যাচ্ছে। তাকে ঘিরে এলাকায় নানা অভিযোগ রয়েছে। অনেকেই অভিযোগে পুলিশকে মাসোহারা দিয়েই সে নারীদের নানা ভুয়া চিকিৎসা দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। একজন রোগীকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা চুক্তি করে সে চিকিৎসা দিচ্ছে। মানুষের সাথে প্রতারণা করে সে এরই মধ্যে কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তিনি আরও জানান, প্রতারণার হাতিয়ার হিসেবে হাবিবুর হুজুর অনেক রুপ ধারন করেন। পরিস্থিতি বুঝে সেভাবেই পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি (হাবিব) কখনও বড় সাংবাদিক সাজেন। কখনও মানবাধীকারকর্মী। কখনও বড়পীর। এসব পরিচয়ে তিনি নারীদের প্রতারণা ফাঁদে ফেলছেন। তিনি প্রথমে এলাকায় ঘরির মেকারের কাজ করতেন। তাতে সুবিধা করতে না পরে হয়ে যান স্থানীয় মসজিদের ইমাম। সর্বশেষ হাবিব ভন্ড কবিরাজ ওরফে ‘হাবিব হুজুর’।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ঘরে স্ত্রী রেখেই তিনি এরই মধ্যে এক হিন্দু মেয়েকে দ্বিতীয় বিবাহ করেছেন। প্রথম স্ত্রীকে নির্যাতন করায় দুই মাস আগে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পরে পুলিশকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে তার সব অপকর্ম ধামা চাপা দিয়েছেন।
হাবিব হুজুরের কর্মকান্ড তুলে ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বৃহম্পতিবার (ডিএসবি) পুলিশের সদস্যরা তার কর্মকান্ডের ওপর তদন্তে নেমেছেন। পুলিশের উপস্থিতি ঁেটর পেয়ে হাবিব তার আস্তনা থেকে পালিয়ে যায়। তার আস্তানায় বিপুল সংখ্যক নারীর আনাগোনা দেখা গেছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ডিএসবি পুলিশের এক সদস্য।
তবে ব্যাপারে জানতে হাবিব হুজুরের (০১৮২৪-৯৬০-২৮৮) মোবাইল নাম্বারে কল করলে তিনি কল রিসিভ না করায় তার কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
আড়াইহাজার উপজেলা টিএইচও ডাক্তার হাবিব ইসমাইল ভূঁইয়া বলেন, রোববার (আজ) হাবিব হুজুরের বিষয়ে তদন্তে যাবে একটি টিম। পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আড়াইহাজার থানার ওসি মুহাম্মদ আবদুল হককে এ ব্যাপারে তিনি কোন কথা বলতে রাজী হয়নি।